সিরিয়া বিজয় • বাশারের পতনে ইসরায়েল খুশি কেন?

বাশার আল-আসাদের পতন সিরিয়ার ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে এটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, এই পরিবর্তন তাদের কৌশলগত সুবিধার জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু কেন? এই পোস্টে আমরা ইসরায়েলের আনন্দের কারণ এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি বিশদভাবে আলোচনা করব।

বাশারের পতনে ইসরায়েল খুশি কেন?

সিরিয়ার সংকট এবং বাশারের শাসন

বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর সিরিয়ার ক্ষমতায় আসেন। তার শাসন শুরুতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ধীরে ধীরে এটি স্বৈরশাসনে রূপ নেয়। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু করে। এটি কয়েক দশকের স্থিতিশীলতা ভেঙে দেয় এবং দেশটি এক অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যায়।

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েল বাশার আল-আসাদের শাসনকালকে কখনোই সঠিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। বাশার ছিলেন ইরান ও হিজবুল্লাহর একজন বিশ্বস্ত মিত্র। সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইরানের অস্ত্র সরবরাহ এবং হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ইসরায়েল কেন বাশারের পতনে খুশি?

১. ইরানের শক্তি দুর্বল হওয়া

বাশারের শাসন ইরানের জন্য সিরিয়ায় সামরিক এবং কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। তার পতনের ফলে ইরানের সরাসরি প্রভাব হ্রাস পেতে পারে।

ইরানের জন্য সিরিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • ইরান থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র সরবরাহের প্রধান রুট।
  • মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের মূল কেন্দ্র।

২. সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নয়ন

ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সিরিয়ার গোলান মালভূমি একটি কৌশলগত এলাকা। সিরিয়ার আক্রমণাত্মক অবস্থান এবং হিজবুল্লাহর উপস্থিতি ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বাশারের পতনে ইসরায়েল এই হুমকির হ্রাস দেখতে পাবে।

৩. নতুন কূটনৈতিক সুযোগ

বাশারের পতনে সিরিয়ায় একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হতে পারে। এটি ইসরায়েলের জন্য নতুন আঞ্চলিক মিত্র তৈরি করার একটি সুযোগ হতে পারে।

সিরিয়ার ভবিষ্যত: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি

পাওয়ার ভ্যাকুয়াম এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান

বাশারের পতন মানেই একটি স্থিতিশীল সিরিয়া নয়। ক্ষমতার শূন্যতা চরমপন্থী গোষ্ঠী যেমন আইএসআইএস-এর মতো সংগঠনগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা

সিরিয়ার পতন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে। বিশেষত, লেবানন, জর্দান এবং তুরস্ক এই পরিবর্তনের ফলে সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে।

ইসরায়েলের সীমাবদ্ধতা

যদিও ইসরায়েল বাশারের পতনকে স্বাগত জানাচ্ছে, তারা জানে যে এটি সব সমস্যার সমাধান নয়। নতুন সরকার বা শাসনব্যবস্থা কেমন হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

বাশারের পতন: গ্লোবাল প্রভাব

রাশিয়ার ভূমিকা সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়া বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র ছিল। তার পতন রাশিয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটি কৌশলগত ধাক্কা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় গণতান্ত্রিক পরিবর্তন চেয়েছে। বাশারের পতন তাদের এই কৌশলগত লক্ষ্যের দিকে একটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা

সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতন ইসরায়েলের জন্য একটি সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই। ইরানের প্রভাব হ্রাস এবং সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নয়ন ইসরায়েলের জন্য ইতিবাচক। তবে নতুন ক্ষমতার শূন্যতা এবং চরমপন্থার উত্থান আরও বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ইসরায়েল যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে কৌশল গ্রহণ করে, তবে এই পরিস্থিতি তাদের পক্ষে কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনতে পারে।

Leave a Comment