২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (NSI)-এর শীর্ষ ১০টি অভিযান ও কার্যক্রমের বিস্তারিত বিশ্লেষণ। প্রতারণা দমন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সাম্প্রতিক বিতর্কসহ NSI-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা।

NSI-এর শীর্ষ ১০ অভিযান ও কার্যক্রম: ২০২৪-২০২৫ সালের আপডেটসহ বিশ্লেষণ
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (NSI) বাংলাদেশের প্রধান বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে NSI বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অভিযান ও কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। নিচে এই সময়কালের শীর্ষ ১০টি অভিযান ও কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হলো:
Also Read
- NSI-এর অভিযান, সফলতা ও বিশ্বপরিচয়: বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তৎপরতার বিশ্লেষণ
- NSI-এর ইতিহাস ও কার্যক্রম: বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পূর্ণ বিবরণ
- NSI-এর শীর্ষ ১০ অভিযান ও কার্যক্রম: ২০১৫–২০২৫ সালের আপডেটসহ বিশ্লেষণ
- NSI এর কার্যক্রম: ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা ও বিতর্ক
- অক্ষয় তৃতীয়া 2025: তাৎপর্য, পূজার সময়, শুভ কাজ ও শুভেচ্ছা
১. NSI নিয়োগ প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান
২০২৪ সালের মে মাসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং NSI-এর যৌথ অভিযানে ছয়জন প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ভুয়া NSI কর্মকর্তা পরিচয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১৫-১৭ লাখ টাকা করে আদায় করত। তাদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড, কম্পিউটার ইত্যাদি জব্দ করা হয়।
২. চট্টগ্রামে ভুয়া NSI কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ভুয়া NSI কর্মকর্তা পরিচয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তারা ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং ভুয়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতেন।
৩. ইয়েমেনে অপহৃত জাতিসংঘ কর্মকর্তার উদ্ধার অভিযান
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেনের মুদিয়া প্রদেশে আল-কায়েদা সদস্যদের দ্বারা অপহৃত জাতিসংঘ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সুফিউল আনামকে ১৮ মাস পর সফলভাবে উদ্ধার করে NSI। এই অভিযান আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়। Wikipedia
৪. সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে NSI-এর সমন্বয়
NSI সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (ATU) এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের কাছ থেকে জিহাদি সাহিত্য ও ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়। Wikipedia
৫. ২০০৪ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্র মামলার আপিল ও NSI কর্মকর্তাদের অব্যাহতি
২০০৪ সালের চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টে আপিলের শুনানি হয়। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং NSI-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়। Wikipedia
৬. NSI-এর নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদকে NSI-এর নতুন মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। Wikipedia
৭. NSI-এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫
২০২৫ সালের মার্চ মাসে NSI ১৩টি পদে মোট ২৫৫ জন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদন প্রক্রিয়া ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া NSI-এর দক্ষ জনবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। Govt Job Circular
৮. সাংবাদিকদের উপর নজরদারি ও হয়রানি অভিযোগ
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় NSI এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাংবাদিকদের উপর নজরদারি ও হয়রানি করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাংবাদিকদের প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
৯. ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় NSI-এর ভূমিকা
জুলাই আন্দোলনের সময় সরকার দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এই সময় NSI-এর ভূমিকা ছিল আন্দোলনকারীদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা।
১০. NSI কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও বিচার
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে NSI-এর সীমান্ত বিভাগের সাবেক পরিচালক কমোডর মনিরুল ইসলামকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও, NSI-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) টি এম জোবায়ের এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। Daily Observer
শেষ কথা:
২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে NSI বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অভিযান ও কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়েছে। তবে, কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে সাংবাদিকদের উপর নজরদারি ও হয়রানির অভিযোগ নিয়ে। ভবিষ্যতে NSI-এর কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও জনবান্ধব হবে বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন:
আপনার মতামত ও প্রশ্ন আমাদের জানাতে মন্তব্য করুন।