বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন: কে এই মোহাম্মদ আল-জোলানি?

কে এই মোহাম্মদ আল-জোলানি হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা, সিরিয়ার বিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার জীবন, সামরিক ক্যারিয়ার এবং বিতর্ক নিয়ে বিস্তারিত জানুন।

বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন: কে এই মোহাম্মদ আল-জোলানি?

মোহাম্মদ আল-জোলানির পরিচিতি

মোহাম্মদ আল-জোলানি, প্রকৃত নাম আহমেদ হুসেন আল-শার’আ, ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী যোদ্ধা নেতা এবং হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর দ্বিতীয় আমির হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। জোলানি সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে বিদ্রোহী শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন এবং আল-কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন ধরনের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

জোলানির শৈশব ও পরিবার

জোলানির পরিবার সিরিয়ার গোলান হাইটস থেকে এসেছে, যা ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করে। তার বাবা, হুসেন আল-শার’আ, একজন আরব জাতীয়তাবাদী এবং নাসেরবাদী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। সিরিয়ার বাথ পার্টির শাসনামলে তিনি বারবার গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন, যেখানে তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং সৌদি তেলের শিল্পে কাজ করেন। জোলানি তার শৈশবের প্রথম দিকের বছরগুলো সৌদি আরবে কাটিয়েছেন এবং ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে।

সামরিক ও রাজনৈতিক জীবন

আল-কায়েদা এবং আইএস-এর সাথে সংযোগ

জোলানি ২০০৩ সালে ইরাকে যান এবং আল-কায়েদা ও পরবর্তীতে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সাথে যুক্ত হন। তিনি ২০১২ সালে সিরিয়ায় আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন, যা আল-কায়েদার সিরিয়ান শাখা হিসেবে কাজ করত। তবে ২০১৬ সালে তিনি আল-কায়েদা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং জাবহাত ফাতেহ আল-শাম প্রতিষ্ঠা করেন।

হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্ব

২০১৭ সালে জোলানি হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) আমির হন। HTS সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছে, যেখানে স্থানীয় জনগণের জন্য ট্যাক্স সংগ্রহ, পরিচয়পত্র প্রদান, এবং অন্যান্য সেবাসমূহ প্রদান করা হয়। তবে তার শাসন ব্যবস্থাকে “একনায়কতান্ত্রিক” বলে সমালোচনা করা হয়, বিশেষত বিরোধীদের দমন করার জন্য।

পশ্চিমা সম্পর্ক ও বিতর্ক

সন্ত্রাসবাদী তকমা

জোলানিকে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট “বিশ্ব সন্ত্রাসী” হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। তার বিরুদ্ধে ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি মৃদু মনোভাব প্রদর্শন করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি পশ্চিমা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান না। তিনি সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

২০২৪ সালে সিরিয়ার বিরোধী আক্রমণ

জোলানি ২০২৪ সালে সিরিয়ার বিরোধী দলগুলোর আক্রমণ এবং বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে HTS সিরিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে।

জোলানির ব্যক্তিগত জীবন

জোলানি তার শৈশবে এক সাধারণ এবং অন্তর্মুখী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় দামেস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণমাধ্যম অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে। তবে তার জীবন-পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটে ২০০৩ সালে, যখন তিনি ইরাকে যান এবং সামরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।

শেষ কথা

মোহাম্মদ আল-জোলানি সিরিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বিতর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার সামরিক দক্ষতা, কৌশলগত জোট এবং রাজনৈতিক মডেল একদিকে তাকে সিরিয়ার শাসনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, অন্যদিকে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচিত। তার ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে।

তথ্য:

  • BBC
  • The Washington Institute
  • U.S. State Department

Leave a Comment