শুক্রবার ও ইসলামের গুরুত্ব: পবিত্র দিনের ফজিলত ও কোরআন-হাদিসের আলোকে

শুক্রবার ও ইসলামের গুরুত্ব: পবিত্র দিনের ফজিলত ও কোরআন-হাদিসের আলোকে আজকে জানুন শুক্রবারের গুরুত্ব, এর অর্থ, কোরআনে উল্লেখিত বিশেষতা, হাদিসে বর্ণিত ফজিলত, এবং ইসলামে কেন এই দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।

শুক্রবার ও ইসলামের গুরুত্ব: পবিত্র দিনের ফজিলত ও কোরআন-হাদিসের আলোকে

আরো পড়ুন: শুক্রবারের আমল ও বিশেষ দোয়া

শুক্রবারের গুরুত্ব, এর অর্থ, কোরআনে উল্লেখিত বিশেষতা, হাদিসে বর্ণিত ফজিলত, এবং ইসলামে কেন এই দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়।

শুক্রবার অর্থ কি

শুক্রবার শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে। আরবি ভাষায় “জুমুআহ” (جمعة) শব্দের অর্থ হলো সমবেত হওয়া বা একত্রিত হওয়া। ইসলামে এই দিনটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কারণ এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে স্বীকৃত।

কোরআন এবং হাদিসে শুক্রবারের বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলমানদের জন্য শুক্রবারের জুম্মার নামাজ বাধ্যতামূলক এবং এটি একত্রিত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের দিন। এদিন বিশেষ আমল, দোয়া এবং ইবাদত করলে আল্লাহ তা’আলা বিশেষভাবে তা কবুল করেন।

শুক্রবারকে ইসলামে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়, যা মুসলমানদের জন্য বরকতময় এবং মহিমান্বিত।

শুক্রবার অর্থ কি আরবি

শুক্রবার শব্দটি আরবি ভাষার “جُمُعَة” (জুমু’আ) থেকে এসেছে, যার মানে হলো “একত্রিত হওয়া” বা “সমবেত হওয়া”। আরবি ভাষায় এই দিনটিকে “জুমু’আ” বলা হয়, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ইসলামি সংস্কৃতিতে, শুক্রবার হলো সাপ্তাহিক ঈদ বা একটি পবিত্র দিন, যেদিন মুসলমানরা জুম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে একত্রিত হয়।

শুক্রবার আরবি শব্দ ?

শুক্রবার শব্দটি আরবি ভাষার “جُمُعَة” (জুমু’আ) থেকে এসেছে। এর মানে হলো “একত্রিত হওয়া” বা “সমবেত হওয়া”। ইসলামে, এই দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং তারা শুক্রবারে জুম্মার নামাজের জন্য একত্রিত হয়।

ইসলামে শুক্রবার গুরুত্ব

ইসলামে, শুক্রবার অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন এবং “জুমু’আ” নামক বিশেষ নামাজের জন্য পরিচিত।

শুক্রবারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  1. জুম্মার নামাজ: শুক্রবারে মুসলমানরা একত্রিত হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেন, যা পাঁচটি ফরজ নামাজের মধ্যে অন্যতম। এই নামাজে খুতবা দেওয়া হয় এবং মুসলমানরা একত্রে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
  2. কোরআনের উল্লেখ: কোরআনে শুক্রবারের গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত রয়েছে, যেমন সূরা জুমু’আতে আল্লাহ বলেছেন, “শুক্রবারে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত হওয়া উচিত” (সূরা আল-জুমু’আ, 62:9)।
  3. ফজিলত: শুক্রবারের দিনটির বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এই দিনটিতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত বেশি হয় এবং মুসলমানদের জন্য বিশেষ দোয়া ও আমল আদায়ের সময়।
  4. দুরুদ পাঠ: মুসলমানরা এই দিনে রাসূল (সা.) এর উপর দুরুদ পাঠ করে থাকেন, যা তাদের জন্য বারাকাহ এবং বরকতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শুক্রবার ইসলামে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় দিন এবং এর প্রতি মুসলমানদের অনেক আমল ও ইবাদত রয়েছে।

নিশ্চয়ই শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন

ইসলামে, শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত। এটি এমন একটি দিন যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এই দিনটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া, বরকত এবং পুণ্য লাভের সুযোগ এনে দেয়।

শুক্রবারের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু মূল পয়েন্ট:

  1. জুম্মার নামাজ: শুক্রবারে মুসলমানরা জুম্মার নামাজ আদায় করেন, যা একটি বিশেষ নামাজ। এই নামাজের সময় খুতবা শোনা হয়, যা মুসলমানদের নৈতিক শিক্ষা ও জীবনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। জুম্মার নামাজ একটি ফরজ ইবাদত, যা সপ্তাহের অন্যান্য দিনের নামাজের তুলনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
  2. কোরআনের উল্লেখ: কোরআনে শুক্রবারের দিন বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা জুমু’আ (62:9) তে বলা হয়েছে, “হে যারা বিশ্বাসী, যখন তোমাদের কাছে শুক্রবারের নামাজের আহ্বান হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে মগ্ন হও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো।” এই আয়াতটি শুক্রবারের দিনে আল্লাহর স্মরণে মগ্ন হওয়ার গুরুত্ব এবং জুম্মার নামাজের সময় ব্যস্ততা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়।
  3. ফজিলত: শুক্রবারের দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, এবং এটি মুসলমানদের জন্য পুণ্য অর্জনের একটি বিশেষ দিন।
  4. দুরুদ পাঠ: রাসূল (সা.) এর উপর দুরুদ পাঠ করার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের ইবাদতকে সম্পূর্ণ করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শুক্রবারে আমাকে দুরুদ পাঠ করবে, আমি তার জন্য দোয়া করব।”
  5. দোয়া কবুল: শুক্রবারের দিনটিতে আল্লাহ তাআলা বিশেষ দোয়া কবুল করেন। বিশেষ করে জুম্মার দিন দোয়া করার সময় আল্লাহ দ্রুত তার বান্দার দোয়া মঞ্জুর করেন।

এভাবে, শুক্রবার মুসলমানদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন, এবং এটি তাদের জীবনে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।

শুক্রবার মানে কি

শুক্রবার (Friday) একটি সাপ্তাহিক ছুটি এবং ইসলামী ক্যালেন্ডারের পবিত্র দিন। এটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি জুম্মার নামাজ (Jumu’ah prayer) এবং আল্লাহর প্রতি দোয়া এবং স্মরণের দিন হিসেবে পরিচিত।

শুক্রবারের অর্থ:

  1. আরবি অর্থ: “শুক্রবার” শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে এবং এর মূল অর্থ “সমবেত হওয়া” বা “একত্রিত হওয়া”। এটি সেই দিনকে নির্দেশ করে, যখন মুসলমানরা একত্রিত হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেন।
  2. ইসলামে গুরুত্ব: ইসলামে শুক্রবারকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনে মুসলমানরা আল্লাহর সামনে বিশেষভাবে দোয়া করেন, এবং রাসূল (সা.) বলেছেন যে, এই দিনটি পাপ মাফ এবং রহমত লাভের দিন।
  3. বিশেষ দিন: শুক্রবারের দিনটি মুসলমানদের জন্য একত্রিত হওয়া, আল্লাহর স্মরণে মগ্ন হওয়া, এবং জুম্মার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈমানের শক্তি বাড়ানোর একটি সুযোগ প্রদান করে।

তাহলে, শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন যা মুসলমানদের জন্য আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের একত্রিত হওয়ার এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার একটি সময়।

ইসলামে শুক্রবার কেন গুরুত্ব পূর্ণ

ইসলামে শুক্রবার একটি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ দিন। এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত, এবং মুসলমানদের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। শুক্রবারের গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন দিক রয়েছে:

  1. জুম্মার নামাজ: শুক্রবারের বিশেষত্ব প্রধানত জুম্মার নামাজ (Jumu’ah prayer)-এর মাধ্যমে। এটি ঐতিহ্যবাহী দিনের নামাজ, যা অন্য যে কোনো দিনের সালাতের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “শুক্রবার এমন এক দিন, যে দিন আল্লাহ এক বিশেষ রহমত ও বরকত প্রদান করেন।”
  2. কোরআনে উল্লেখ: কোরআনে সূরা আল-জুমুআ (Surah Al-Jumu’ah) রয়েছে, যেখানে আল্লাহ শুক্রবারের দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন এবং মুসলমানদের জুম্মার নামাজের সময় কাজ বন্ধ করে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আল-জুমুআ: ৯)।
  3. ঈশ্বরের নিকট দোয়া কবুল: শুক্রবারের দিন দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় রয়েছে, এবং রাসূল (সা.) বলেছেন, “শুক্রবারের মধ্যে একটি বিশেষ সময় আছে, যখন যদি কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।”
  4. মুসলমানদের একত্রিত হওয়া: শুক্রবারের দিনটি মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এই দিনে মুসলমানরা জুম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করে এবং সমাজের সকল মানুষ একত্রিত হয়। এটি মুসলিম কমিউনিটির জন্য একটি সামাজিক এবং ধর্মীয় ঐক্যের সময়।
  5. রহমত ও মাগফিরাত: রাসূল (সা.) বলেছেন, “শুক্রবার আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের জন্য বিশেষ রহমত এবং পাপ মাফের সুযোগ দেন।” এই দিন আল্লাহর অনুগ্রহের প্রার্থনা করা এবং দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  6. শুক্রবারের ফজিলত: শুক্রবারের দিন অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে, যেমন সূরা কাহাফ পড়া, দুরুদ শরিফ পাঠ করা, এবং বিশেষ দোয়া ও আমল করা।

এভাবে, শুক্রবার মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের সুযোগ প্রদান করে।

ইসলামে শুক্রবার সম্পর্কে কিছু তথ্য

ইসলামে শুক্রবার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিম্নরূপ:

  1. শুক্রবারের বিশেষত্ব:
    • শুক্রবার ইসলামের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। রাসূল (সা.) বলেছেন, “শুক্রবার হল সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন, এর মধ্যে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হয়।” (সহীহ মুসলিম)
  2. জুম্মার নামাজ:
    • জুম্মার নামাজ (Friday Prayer) মুসলমানদের জন্য বিশেষ আমল। এটি অপরাধ মাফের দিন হিসেবে পরিচিত এবং মসজিদে একত্রিত হয়ে বিশেষ সাপ্তাহিক সালাত অনুষ্ঠিত হয়। জুম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং এটি একে অপরকে সান্নিধ্য দেয়।
  3. কোরআনে উল্লেখ:
    • কোরআনে সূরা আল-জুমুআ (Surah Al-Jumu’ah) নামে একটি সূরা রয়েছে, যেখানে আল্লাহ শুক্রবারের দিনের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। এই সূরায় মুসলমানদের জুম্মার নামাজের সময় কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরা আল-জুমুআ: ৯)
  4. বিশেষ দোয়া ও রহমত:
    • শুক্রবারে বিশেষ একটি সময় থাকে, যখন আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দোয়া কবুল করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, “শুক্রবারের মধ্যে একটি বিশেষ সময় আছে, যখন আল্লাহ তা’আলা মুসলমানের যেকোনো দোয়া কবুল করেন।”
  5. ফজিলতপূর্ণ আমল:
    • শুক্রবারের দিনটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ আমলের দিন, যেমন:
      • সূরা কাহাফ পাঠ: শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শুক্রবার রাতে অথবা দিনে সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষণ করবেন।”
      • দুরুদ শরিফ পাঠ: শুক্রবারের দিন দুরুদ শরিফ পাঠ করার ব্যাপক ফজিলত রয়েছে, যেহেতু এই দিনটি বিশেষভাবে আল্লাহর নিকট প্রিয়।
  6. মৃত্যুর পরের ফজিলত:
    • শুক্রবারে মারা যাওয়া ব্যক্তির জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শুক্রবারে মারা যাবে, আল্লাহ তাকে কবরে মুসাফিরের মতো শান্তি দেবেন।”
  7. জন্মের গুরুত্ব:
    • যেকোনো ব্যক্তি যদি শুক্রবারে জন্মগ্রহণ করে, তবে তাকে বিশেষ ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে জীবন কাটানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়, কারণ শুক্রবার একটি বরকতপূর্ণ দিন।

এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায় যে শুক্রবার ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন একটি দিন, যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ ধরণের আধ্যাত্মিক সুযোগ ও রহমত নিয়ে আসে।

ইসলামে শুক্রবার বিশেষ দিনগুলো

ইসলামে শুক্রবার বিশেষ একটি দিন হিসেবে বিবেচিত এবং এর মধ্যে কিছু বিশেষ দিনও রয়েছে, যেগুলোর প্রতি মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। এই দিনগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:

১. রমজান মাসের শেষ শুক্রবার:

  • রমজান মাসের শেষ শুক্রবারের গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এটি শাবান মাসের শেষ শুক্রবার বা রমজান মাসের প্রথম শুক্রবার হতে পারে, যখন মুসলমানরা আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করেন এবং আগত ঈদুল ফিতরের জন্য প্রস্তুতি নেন। এই দিনে অতিরিক্ত নফল নামাজ ও দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ।

২. ঈদুল ফিতর (রমজান শেষে প্রথম শুক্রবার):

  • রমজান মাসের শেষে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় এবং যদি এই ঈদ শুক্রবারে পড়ে, তবে এটি আরো অধিক মর্যাদা লাভ করে। ঈদের সালাত (ঈদের নামাজ) সাধারণত শুক্রবারে পড়া হয়, এবং এটি মুসলিম সমাজের মধ্যে আনন্দ, সহানুভূতি এবং ঐক্যের প্রতীক।

৩. ঈদুল আজহা (কোরবানির ঈদ):

  • ঈদুল আজহাও অনেক সময় শুক্রবারে হতে পারে। এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মুসলমানরা আল্লাহর পথে কোরবানি দিয়ে থাকেন এবং এটি এক ধরনের পূর্ণতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি দিন।

৪. শাহাদাত বা মৃত্যু দিবস:

  • ইসলামি ইতিহাসে কিছু মহান ব্যক্তি বা সাহাবীর শাহাদাত (মৃত্যু) শুক্রবারে ঘটেছিল, যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণযোগ্য। বিশেষ করে রাসূল (সা.) এবং সাহাবী ও তাবেঈদের শাহাদাতকে সম্মান জানানো হয়।

৫. শব-ই-বরাত (মধ্য শাবান):

  • শব-ই-বরাত, যেটি মধ্য শাবান রাতে উদযাপিত হয়, শুক্রবারে পড়লে তার গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এই রাতে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে দোয়া করেন, এবং এটি বিশেষভাবে রহমত এবং ক্ষমার রাত হিসেবে পরিচিত।

৬. শুক্রবারের একদিন বা “দোয়ার সময়”:

  • শুক্রবারে বিশেষ দোয়ার সময় থাকে, যখন মুসলমানদের দোয়া আল্লাহ তাআলার কাছে দ্রুত কবুল হয়। এই সময়কে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।

ইসলামে শুক্রবার তাই শুধুমাত্র সাপ্তাহিক ছুটির দিন নয়, বরং এটি বিশেষভাবে ধার্মিক কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন, এবং কিছু বিশেষ দিনগুলোর সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে।

কোরআনে শুক্রবারের কথা বলা হয়েছিল?

হ্যাঁ, কোরআনে শুক্রবার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনের সুরা আল-জুমু‘আ (62:9)-এ শুক্রবারের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে:

কোরআনের আয়াত:

“হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের কাছে জুমুআর দিন (শুক্রবার) নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে তৎকালীন কাজ ছেড়ে দাও। এটি তোমাদের জন্য আরও মঙ্গলজনক, যদি তোমরা জানো।” (সুরা আল-জুমু‘আ, আয়াত 9)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন শুক্রবারে জুমআর নামাজের সময় আহ্বান করা হয়, তখন তাদের অন্যান্য কাজকে ত্যাগ করে আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হতে হবে। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ দিন, যেখানে একে অপরকে আল্লাহর রাস্তা প্রদর্শন করতে এবং পার্থিব বিষয়াদি থেকে মুক্ত হয়ে দ্বীনী কার্যক্রমে মনোযোগী হতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, শুক্রবারের দিন মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত, এবং এটি জুমার নামাজদোয়া করার জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ দিন।

কোরআনে শুক্রবারের সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

কোরআনে শুক্রবারের সম্পর্কে যে আয়াতটি রয়েছে, তা হলো:

আরবি: “يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ”
(سورة الجمعة، آية 9)

বাংলা অনুবাদ: “হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের কাছে জুমুআর (শুক্রবার) নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে তৎকালীন কাজ ছেড়ে দাও। এটি তোমাদের জন্য আরও মঙ্গলজনক, যদি তোমরা জানো।”
(সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত 9)

বাংলায় উচ্চারণ: “Ya ayyuha alladhina amanu idha nudiya lilsalati min yawmi aljumati fas’aw ila dhikri Allahi wadharu al-biya’a. Thalikum khayrun lakum in kuntum ta’lamun.”
(সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত 9)

এটি মুসলমানদের প্রতি একটি নির্দেশ, যাতে তারা পার্থিব কাজ থেকে বিরত হয়ে শুক্রবার নামাজের সময় আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হন।

কোরআনে শুক্রবার শব্দ কতবার আছে ও কোথায়

কোরআনে “শুক্রবার” (جمعه, Jummah) শব্দটি একবার এসেছে এবং এটি সূরা আল-জুমু‘আ (সূরা 62, আয়াত 9) তে পাওয়া যায়।

আরবি: “يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ”

বাংলা অনুবাদ: “হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের কাছে জুমুআর (শুক্রবার) নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে তৎকালীন কাজ ছেড়ে দাও। এটি তোমাদের জন্য আরও মঙ্গলজনক, যদি তোমরা জানো।”

অর্থ: এ আয়াতে শুক্রবার নামাজের গুরুত্ব এবং মুসলমানদেরকে শুক্রবারের সময় আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে।

শুক্রবার সম্পর্কে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কি বলেছিলেন

শুক্রবার সম্পর্কে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম (সা.)-এর হাদিসগুলি ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি শুক্রবারকে একটি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো:

  1. হাদিস ১:
    • ইবনে মাজাহ থেকে এসেছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন: “শুক্রবার হচ্ছে সপ্তাহের সেরা দিন। এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এবং এই দিনে তিনি পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন, আর এই দিনেই তার মৃত্যুও হয়েছিল। তাই, তোমরা এই দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাও এবং বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো।”
  2. হাদিস ২:
    • সহীহ মুসলিম-এ আছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন: “শুক্রবারের দিনে এক মুহূর্ত থাকে, যখন যদি আল্লাহর কাছে কোনো বান্দা দোয়া করে, আল্লাহ তা গ্রহণ করেন।”
  3. হাদিস ৩:
    • সহীহ মুসলিম-এ আরও আছে: “শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়া মুস্তাহাব।”
      এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং হাদিসে বলা হয়েছে যে, সূরা কাহাফ পড়া শুক্রবারের ফজিলত অর্জনে সাহায্য করে।

এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, শুক্রবার মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ দিন, এবং এই দিনে আল্লাহর স্মরণ, দোয়া এবং নফল আমল করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

শুক্রবার এর ফজিলত

শুক্রবারের ফজিলত ইসলামে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। এই দিনটি সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে, যেগুলি মুসলমানদের জন্য নানা ধরনের বরকত ও পুরস্কারের সম্ভাবনা প্রদান করে।

এখানে শুক্রবারের ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

  1. সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন:
    মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন:
    • “নিশ্চয়ই শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন।” (সহীহ মুসলিম)
    • এটি সাপ্তাহিক ঈদের মতো, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
  2. দোয়া কবুলের সময়:
    শুক্রবারে এমন একটি সময় রয়েছে যখন আল্লাহ তা’আলা দোয়া কবুল করেন।
    মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন:
    • “শুক্রবারে একটি মুহূর্ত থাকে, যখন আল্লাহর কাছে যেকোনো দোয়া কবুল হয়।” (সহীহ মুসলিম)
  3. সূরা কাহাফ পড়া:
    শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়া বিশেষ ফজিলতপূর্ণ।
    মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন:
    • “যে ব্যক্তি শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সারা সপ্তাহের জন্য আলোর সান্নিধ্য থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)
  4. দুরুদ পাঠ:
    শুক্রবারে দুরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
    মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন:
    • “শুক্রবারে আমার উপর দুরুদ পাঠ করো, কেননা তোমরা যখনই আমাকে দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা তা আমার কাছে পৌঁছে দেন।” (সহীহ মুসলিম)
  5. শুক্রবারের নামাজ:
    শুক্রবারের জুম্মা নামাজ অন্যান্য পাঁচটি নামাজের তুলনায় অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ এবং এটি একটি বিশেষ জামায়াতে আদায় করা হয়।
  6. গুনাহ মাফের দোয়া:
    শুক্রবারে গুনাহ মাফের দোয়া করা অত্যন্ত কার্যকরী। এই দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে পাপ ক্ষমা হতে পারে।

শুক্রবারের এই ফজিলতগুলো মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ, যা তাদের ঈমান, আমল এবং আল্লাহর কাছ থেকে বরকত লাভের সুযোগ প্রদান করে।

শেষ কথা:
শুক্রবার ইসলামের একটি বিশেষ পবিত্র দিন, যার মধ্যে রয়েছে অনেক ফজিলত ও বরকত। এই দিনটির গুরুত্ব শুধু নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে নয়, বরং তা আমাদের আত্মিক উন্নতি, গুনাহ মাফ, এবং আল্লাহর রহমত লাভের এক বিরাট সুযোগ। সূরা কাহাফ পাঠ, দুরুদ পাঠ, জুম্মা নামাজ এবং বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, এসব আমাদের জন্য এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়। আমাদের উচিত এই দিনের পূর্ণ ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নিকট আশীর্বাদ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।

Leave a Comment