ইসকন (ISKCON) একটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রচার করে। জানুন ইসকনের ইতিহাস, উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে কার্যক্রম, মন্দির ও সনাতন ধর্মের সাথে এর সম্পর্ক। বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন।

ইসকন হলো International Society for Krishna Consciousness এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি ধর্মীয় সংগঠন, যা ভগবদ্গীতা ও ভাগবতমের শিক্ষা প্রচার করে এবং কৃষ্ণভক্তি আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের: পরিচয়, মামলা, অপরাধ ও সাম্প্রতিক আপডেট
ইসকন কি?
ইসকন (ISKCON) এর পূর্ণরূপ হলো International Society for Krishna Consciousness, যা বাংলায় পরিচিত “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” নামে। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সংগঠন, যা বৈষ্ণব ধর্মের উপর ভিত্তি করে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার করে।
ইসকনের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধি করা এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা ও ভাগবতের শিক্ষা প্রচার করা। এটি ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়।
ইসকনের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
- কৃষ্ণভক্তি আন্দোলন প্রচার।
- মন্দির প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা।
- প্রসাদ বিতরণ।
- সামাজিক ও মানবিক সেবা।
ইসকন এর পূর্ণরূপ কি?
ইসকন এর পূর্ণরূপ:
International Society for Krishna Consciousness (ISKCON)।
বাংলায় এটি পরিচিত “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” নামে।
ইসকনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, এবং এর মূল লক্ষ্য হলো বৈষ্ণব দর্শনের প্রচার, শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচলন, এবং ভগবদ্গীতা ও ভাগবত পুরাণের শিক্ষাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।
ইসকন কারা চালায়?
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, যিনি ১৯৬৬ সালে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইসকনের পরিচালনা বর্তমানে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আঞ্চলিক নেতাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ইসকন পরিচালনার ধরণ:
- জিসিবি (Governing Body Commission):
ইসকনের শীর্ষ পরিচালনা পর্ষদ। এটি ১৯৭০ সালে শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। জিসিবি সংগঠনের নীতি নির্ধারণ ও কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। - আঞ্চলিক পরিচালক:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য স্থানীয় পরিচালকদের নিযুক্ত করা হয়। - মন্দির ও আশ্রম পরিচালনা:
প্রতিটি ইসকন মন্দিরের নিজস্ব প্রশাসনিক দল থাকে, যারা স্থানীয় কার্যক্রম, ভক্তদের সেবা, এবং সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। - ভক্ত সম্প্রদায়:
ইসকনের সক্রিয় ভক্ত এবং স্বেচ্ছাসেবীরা সংগঠনের বিভিন্ন প্রকল্প এবং কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইসকনের পরিচালনা আধ্যাত্মিক, সামাজিক এবং শিক্ষামূলক দিকগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
ইসকন বনাম সনাতন হিন্দু: মূল পার্থক্য এবং মিল
ইসকন এবং সনাতন হিন্দু ধর্মের মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকলেও, তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য এবং বিশেষত্ব রয়েছে।
ইসকন (ISKCON):
- সংগঠন ভিত্তিক:
ইসকন হলো একটি সংগঠিত আধ্যাত্মিক আন্দোলন, যা ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। - শ্রীকৃষ্ণ কেন্দ্রিক:
ইসকন শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণকে সর্বোচ্চ ভগবান এবং ভক্তির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। - শাস্ত্রের ভিত্তি:
- ভগবদ্গীতা এবং ভাগবত পুরাণকে প্রধান শাস্ত্র হিসেবে মেনে চলে।
- চৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব দর্শনের প্রচার করে।
- উপাসনার পদ্ধতি:
- মূলত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তনের মাধ্যমে ভক্তি প্রকাশ করা হয়।
- নিরামিষ আহার, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং গুরু শিষ্য পরম্পরা অনুসরণ বাধ্যতামূলক।
- আন্তর্জাতিক প্রসার:
ইসকন বিশ্বব্যাপী সক্রিয় এবং সনাতন ধর্মের বৈষ্ণব চর্চাকে প্রচার করে।
সনাতন হিন্দু ধর্ম:
- প্রাচীন এবং বিস্তৃত:
সনাতন ধর্ম হাজার হাজার বছরের পুরোনো এবং এটি হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি। - বহু দেবতার উপাসনা:
সনাতন ধর্মে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ অনেক দেব-দেবীর উপাসনা প্রচলিত। - শাস্ত্রের বৈচিত্র্য:
- বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, মহাকাব্য (মহাভারত, রামায়ণ) ইত্যাদি বহু গ্রন্থকে সমান গুরুত্ব দেয়।
- কোনো নির্দিষ্ট শাস্ত্র মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নেই।
- উপাসনার পদ্ধতি:
মন্ত্রপাঠ, যজ্ঞ, পূজা, তীর্থযাত্রা, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়। - সামাজিক এবং আঞ্চলিক বৈচিত্র্য:
সনাতন ধর্মের চর্চা ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে।
মিল:
- ইসকন সনাতন ধর্মের একটি অংশ এবং বৈষ্ণব ভাবধারার অন্তর্গত।
- উভয়ই ভগবান বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণকে উপাস্য দেবতা হিসেবে মেনে চলে।
- আধ্যাত্মিক উন্নতি, ধর্মীয় চর্চা, এবং মানবকল্যাণে বিশ্বাসী।
মূল পার্থক্য:
বিষয় | ইসকন | সনাতন হিন্দু ধর্ম |
---|---|---|
উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু | শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণ | বিভিন্ন দেবতা |
সংগঠন | নির্দিষ্ট সংগঠিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান | সংগঠিত নয়, প্রথাভিত্তিক ধর্ম |
আন্তর্জাতিক প্রসার | বিশ্বব্যাপী | প্রধানত ভারতীয় উপমহাদেশে সীমাবদ্ধ |
জীবনযাপনের নীতি | গুরু শিষ্য পরম্পরা ও নিরামিষ ভোজনে বাধ্যতা | ব্যক্তিগত পছন্দ ও আচার-অনুষ্ঠানভিত্তিক |
ইসকন সনাতন ধর্মের একটি নির্দিষ্ট শাখা, যা বৈষ্ণব ভক্তিকে কেন্দ্র করে গঠিত। তবে সনাতন ধর্মের অন্যান্য শাখার মতো ইসকনও আধ্যাত্মিকতা ও ভক্তির প্রচারে কাজ করে। এটি সনাতন ধর্মের প্রচলিত রীতিগুলোর তুলনায় আরও সংগঠিত এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক।
আরো পড়ুনঃ গাজওয়াতুল হিন্দ কি
ইসকন বাংলাদেশ
ইসকন (ISKCON), যা “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” নামে পরিচিত, বাংলাদেশে একটি সক্রিয় ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক সংগঠন। এটি বৈষ্ণব দর্শন এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচারের জন্য কাজ করে।
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা:
- ইসকন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭০-এর দশকে।
- এর প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে বৈষ্ণব ভাবধারা এবং ভগবদ্গীতার শিক্ষা প্রচার করা।
বাংলাদেশে ইসকনের প্রধান মন্দির:
- ঢাকা ইসকন মন্দির (স্বামীবাগ):
- ঢাকার এই মন্দির ইসকনের প্রধান কেন্দ্র।
- এখানে দৈনন্দিন পূজা, প্রসাদ বিতরণ এবং ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
- চট্টগ্রাম প্রবর্তক মন্দির:
- চট্টগ্রামের এই মন্দির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইসকন কেন্দ্র।
- সিলেট, খুলনা, এবং অন্যান্য শহরে কেন্দ্র:
- বাংলাদেশে ইসকনের আরও অনেক আঞ্চলিক মন্দির ও আশ্রম রয়েছে।
কার্যক্রম:
- শিক্ষা ও ধর্ম প্রচার:
- ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত শিক্ষার প্রচার।
- আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধি এবং ভক্তি আন্দোলনের প্রসার।
- সামাজিক সেবা:
- গরিব ও অসহায়দের জন্য প্রসাদ বিতরণ।
- মানবিক কার্যক্রম, যেমন খাবার বিতরণ ও শিক্ষা সহায়তা।
- উৎসব পালন:
- জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা, গৌর পূর্ণিমা ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব উদযাপন।
- তরুণ সমাজের উন্নয়ন:
- তরুণদের আধ্যাত্মিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি।
বাংলাদেশে ইসকনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব:
ইসকন বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্থানীয় ভক্তদের দ্বারা, যারা বৈষ্ণব দর্শনের প্রতি নিবেদিত।
ইসকন বাংলাদেশে কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
ইসকন বাংলাদেশে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে ইসকন বাংলাদেশের প্রথম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার ও ধর্মীয় শিক্ষা ছড়ানোর কাজ শুরু হয়।
ইসকন বাংলাদেশ প্রধান
ইসকন বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে বর্তমানে শ্রীলাম শ্রীধর স্বামী দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসকনের আধ্যাত্মিক নেতা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসকন মন্দির এবং আশ্রমের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি শ্রীল প্রভুপাদের আদর্শে পরিচালিত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ইসকনের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছেন।
বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম
ইসকন (ISKCON), বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে তার ধর্মীয়, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসকনের মূল উদ্দেশ্য হলো শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার, ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত শিক্ষার বিস্তার এবং মানবকল্যাণে অবদান রাখা।
বাংলাদেশে ইসকনের প্রধান কার্যক্রম:
- ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রচার:
- ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত শিক্ষার প্রচার: ইসকন বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্দির এবং কেন্দ্রের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়।
- কীর্তন ও হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ: ভক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ, কীর্তন ও সঙ্গীত আয়োজন করা হয়।
- সামাজিক সেবা:
- প্রসাদ বিতরণ: ইসকন বাংলাদেশের মন্দিরগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন ভক্তদের জন্য শুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবার বিতরণ করা হয়।
- গরিব ও অসহায়দের সহায়তা: অসহায় মানুষদের জন্য খাবার বিতরণ, কাপড় এবং অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
- স্বাস্থ্যসেবা: কিছু মন্দিরে স্বাস্থ্য শিবির এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মসূচি চালানো হয়।
- উৎসব পালন:
- জন্মাষ্টমী: শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উৎসব নানা ধুমধামে উদযাপন করা হয়।
- রথযাত্রা: প্রতি বছর রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়, যেখানে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের রথ টেনে আনন্দ প্রকাশ করেন।
- গৌর পূর্ণিমা: চৈতন্য মহাপ্রভুর উৎসব পালন করা হয়, যিনি ইসকনের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক।
- তরুণ সমাজের উন্নয়ন:
- তরুণদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা: ইসকন তরুণদের জন্য আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও কর্মশালা আয়োজন করে, যাতে তারা সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারে।
- দৈনন্দিন জীবনে ভক্তির চর্চা: তরুণদের জীবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিকে মনোনিবেশ করানোর জন্য বিভিন্ন পাঠ, আলোচনা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
- আধ্যাত্মিক সেবা:
- শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ: ভক্তদের শ্রীমদ্ভাগবত এবং অন্যান্য বৈষ্ণব গ্রন্থ পাঠে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
- গুরু শিষ্য পরম্পরা: গুরু শিষ্য পরম্পরা অনুসরণ করে শ্রীল প্রভুপাদের আদর্শে ধর্মীয় জীবনযাপন শেখানো হয়।
ইসকন বাংলাদেশের সমাজে আধ্যাত্মিক শিক্ষা, সামাজিক সহায়তা এবং ধর্মীয় চর্চার মাধ্যমে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখছে, যা শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি এবং অনুগ্রহে পূর্ণ জীবনযাপনকে উৎসাহিত করে।
ইসকন কি জঙ্গি সংগঠন
না, ইসকন (ISKCON) একটি জঙ্গি সংগঠন নয়। এটি একটি ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক সংঘ যা শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার করে এবং বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী হিসেবে কাজ করে। ইসকনের মূল উদ্দেশ্য হল ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের শিক্ষার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন এবং মানুষের মধ্যে শান্তি, সেবা ও ভালোবাসা ছড়ানো।
ইসকন কখনোই হিংসাত্মক বা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হয়নি। এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ (A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada) ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৬৬ সালে, এবং এর লক্ষ্য ছিল মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। তারা সামাজিক কার্যক্রম যেমন গরিবদের খাবার বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং দানশীলতার কাজ করে থাকে।
যদিও কিছু সময়ে ইসকনকে নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে, তবে এটি একটি শান্তিপূর্ণ, আধ্যাত্মিক সংঘ, যা বিশ্বব্যাপী সবার মধ্যে প্রেম, শান্তি এবং আধ্যাত্মিকতা প্রচারের জন্য কাজ করছে।
ইসকনের ৭ টি উদ্দেশ্য
ইসকনের (ISKCON) সাতটি উদ্দেশ্য বা মূল লক্ষ্যগুলি হল:
- শ্রীকৃষ্ণের ভক্তির প্রচার:
ইসকনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার করা এবং শ্রীকৃষ্ণের মহিমা ও গুণাবলী মানুষের কাছে তুলে ধরা। - ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত শিক্ষার প্রসার:
ভগবদ্গীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবত পাঠের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেওয়া এবং মানুষের জীবনকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করা। - প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা:
সনাতন ধর্মের মূল শিক্ষা এবং বৈষ্ণব দর্শনের নীতি অনুসরণ করে সবার মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধি করা। - মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি:
মানুষের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উন্নতির জন্য উপযোগী শিক্ষা প্রদান করা এবং তাদের জীবনে শান্তি ও সুখ প্রতিষ্ঠা করা। - সামাজিক সেবা ও দানশীলতা:
সমাজের গরীব, অসহায়, এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করা, খাদ্য বিতরণ এবং অন্যান্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। - বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা:
ধর্মীয় শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা। - কীর্তন ও ভগবানকে স্মরণ করা:
শ্রীকৃষ্ণের নামের কীর্তন ও হরে কৃষ্ণ মন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের মন ও হৃদয়কে পরিষ্কার করা এবং তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি সাধন করা।
এই উদ্দেশ্যগুলি ইসকনের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং আধ্যাত্মিক পথের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
ইসকনের সমালোচনা
ইসকন (ISKCON) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, যদিও বিশ্বব্যাপী একটি বড় আধ্যাত্মিক আন্দোলন এবং অনেকের জীবন পরিবর্তন করেছে, তবুও এটি কিছু সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এখানে ইসকনের কিছু সাধারণ সমালোচনার পয়েন্ট তুলে ধরা হলো:
১. আর্থিক অনুশাসন:
ইসকন সম্পর্কে কিছু সমালোচনা এসেছে তার অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপর। কিছু অভিযোগ রয়েছে যে, সংগঠনটি প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে, এবং সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার ও ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু সমালোচক দাবি করেছেন যে, অর্থ সংগ্রহের নামে সদস্যদের উপর চাপ তৈরি করা হয়।
২. প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদের আদর্শে সীমাবদ্ধতা:
ইসকনের সদস্যদের মধ্যে শ্রীল প্রভুপাদের আদর্শকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার প্রবণতা রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, যেহেতু প্রভুপাদই একমাত্র সত্য শিক্ষক, তাই তার আদর্শ ছাড়া আর কোনও পথ অনুসরণ করা সম্ভব নয়।
৩. সম্প্রসারণ কৌশল:
ইসকনের কিছু সমালোচক দাবি করেছেন যে, সংগঠনটি মানুষের মন জয় করতে অনেক সময় অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং চাপ সৃষ্টি করার কৌশল ব্যবহার করে। কিছু ক্ষেত্রে সদস্যদের কাছে নতুন সদস্যদের যোগদান করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
৪. বিচ্ছিন্নতা এবং পরিবারিক সম্পর্ক:
ইসকনের কিছু সদস্যদের পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বহু মানুষ অভিযোগ করেছে যে, ইসকন তাদের জীবনকে এতটা নিয়ন্ত্রণ করে যে, এটি তাদের সামাজিক সম্পর্ক এবং পরিবারের সঙ্গেও প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. লিঙ্গ বৈষম্য:
কিছু সমালোচক দাবি করেছেন যে, ইসকনে পুরুষদের চেয়ে নারীদের ভূমিকা কম বা অসমান। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত প্রথমদিকে, মহিলাদের মন্দিরে পূজারী বা নেতৃত্বের পদে অল্প সুযোগ দেওয়া হত।
৬. ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি সম্পর্ক:
কিছু মানুষ অভিযোগ করেছেন যে, ইসকন অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, এবং তারা অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য কিছুটা সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করে। তবে, ইসকন এর অনুসারীরা দাবি করেছেন যে, তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আধ্যাত্মিকতা এবং ভক্তির প্রসার, এবং তারা অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু মনোভাব পোষণ করে।
ইসকন একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন হিসেবে অনেক মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছে, তবে তার বিভিন্ন কার্যক্রম ও দর্শন সম্পর্কে কিছু সমালোচনা রয়েছে। তবে, এসব সমালোচনা সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বা তার মানবিক কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে না। ইসকনের সদস্যরা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সংগঠনটির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচারে নিবেদিত।
প্রবর্তক ইসকন মন্দির
ইসকন মন্দিরের প্রবর্তক হলেন শ্রীল প্রভুপাদ (A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada), যিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৬৬ সালে। প্রভুপাদ শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি ও বৈষ্ণব ধর্মের শিক্ষাকে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ইসকন মন্দিরের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম:
ইসকন মন্দিরগুলো মূলত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা ও ভক্তির কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানে কীর্তন, ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, মন্ত্র জপ এবং সেবা করা হয়। মন্দিরগুলোর মধ্যে অনেক গুলো কমিউনিটি সেবা, দানশীলতা, গরিবদের খাদ্য বিতরণ, ধর্মীয় শিক্ষার পাঠদান, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।
প্রবর্তক শ্রীল প্রভুপাদ:
শ্রীল প্রভুপাদ ছিলেন একজন মহান আধ্যাত্মিক গুরু ও বৈষ্ণব তত্ত্বজ্ঞ, যিনি ভারতীয় ভক্তি আন্দোলনকে পশ্চিমা দুনিয়ায় পৌঁছে দেন। তিনি ১৯৬৫ সালে একটি জলপথে যাত্রা করে নিউইয়র্কে পৌঁছান, যেখানে তিনি ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্যোগে ইসকন মন্দিরগুলো পুরো পৃথিবীজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে এবং এদের মধ্যে বহু লোক ধর্মীয় চর্চা, আধ্যাত্মিকতা, এবং সমাজসেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।
ইসকন মন্দিরের বৈশিষ্ট্য:
- ভক্তি এবং আধ্যাত্মিকতা: মন্দিরে মূলত শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি, সাধনা, এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার করা হয়।
- মন্ত্র কীর্তন ও উপাসনা: এখানে হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে – এই মন্ত্রের কীর্তন করা হয়।
- আধ্যাত্মিক শিক্ষা: মন্দিরে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ যেমন ভগবদ্গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত, ইত্যাদি পাঠ এবং আলোচনা করা হয়।
- খাদ্য বিতরণ: মন্দিরগুলো সাধারণত “প্রসাদ” (ভগবানকে উৎসর্গ করা খাবার) বিতরণ করে থাকে।
ইসকন মন্দিরগুলি শ্রীল প্রভুপাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আধ্যাত্মিক কেন্দ্র যেখানে কৃষ্ণভক্তি ও সেবা প্রচারের মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হচ্ছে। প্রভুপাদ তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় এই মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছেন, যা আজও শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে পরিচিত।
ইসকনের পতাকা
ইসকনের পতাকা (ISKCON Flag) একটি বিশেষ প্রতীক যা ইন্টারন্যাশনাল কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) এর মূল আদর্শ এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসকনের পতাকা সাধারনত নীল এবং হলুদ রঙের থাকে এবং এতে শ্রীকৃষ্ণের নামের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিশেষ প্রতীক অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ইসকনের পতাকার উপাদান ও অর্থ:
- হলুদ ও নীল রঙ:
ইসকনের পতাকার প্রধান রঙ হল হলুদ এবং নীল। হলুদ রঙ সাধনা, আধ্যাত্মিকতা, এবং শুভতার প্রতীক। নীল রঙ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তির গভীরতা এবং অপূর্ব গুণাবলীকে প্রতিফলিত করে। - পদ্মফুলের প্রতীক:
পতাকায় পদ্মফুল থাকে, যা সাধারণত শ্রীকৃষ্ণের এক বিশেষ প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পদ্মফুল জীবনের বিশুদ্ধতা, আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তির প্রতীক। - হরে কৃষ্ণ মন্ত্র:
পতাকায় “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে” এই বিখ্যাত মন্ত্রের প্রতীক থাকে। এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তির অঙ্গীকার এবং ঈশ্বরের নাম স্মরণ করার মাধ্যমে জীবনের শান্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির বার্তা দেয়। - গোলাকার:
পতাকায় গোলাকার (অথবা চক্র) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এটি মহাসত্য ও শাশ্বত জীবনের চক্রের ইঙ্গিত এবং শ্রীকৃষ্ণের আদর্শের সঙ্গতিপূর্ণ স্থায়িত্বকে নির্দেশ করে।
পতাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ইসকনের পতাকা শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং এটি মন্দিরের বাইরে এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থানগুলোতে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। পতাকাটি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং সমর্পণের প্রতীক হিসেবে একত্রিত হয়ে সকল ভক্তদের মধ্যে একতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
ইসকনের পতাকা শুধু একটি সাধারণ পতাকা নয়, এটি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তির প্রতীক এবং ইসকনের আধ্যাত্মিক আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে। এটি সমস্ত ভক্তদের মধ্যে একতা, শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির অনুভূতি সৃষ্টি করে।
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি সময়ের আলো
হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী পুণ্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রামের পথে যাত্রা করার সময় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাকে আটক করেন। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক এই গ্রেফতারের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশের সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে অধিক পরিচিত।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে একটি মামলা দায়ের হয় চট্টগ্রাম শহরে। মামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসও রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে সমাবেশ আয়োজন করেন।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু কাওসার মাহমুদ হোসেন এই গ্রেফতারের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া, গত ১৮ নভেম্বর, এক সপ্তাহ পূর্বে বুদ্ধিজীবী কবি ও সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার পুণ্ডরীক ধাম মন্দির পরিদর্শন করেন এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী, যিনি গণমাধ্যমকে জানান, ফরহাদ মজহার বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং হিন্দু-মুসলমানদের সাংস্কৃতিক দূরত্ব দূর করার জন্য বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইসকন পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে
ইসকন বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ISKCON)-এর পরবর্তী পদক্ষেপ বেশ কিছু দিক থেকে নির্ভর করতে পারে, বিশেষ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর সংঘটিত পরিস্থিতি, সংগঠনের কর্তৃপক্ষ এবং সদস্যদের প্রতিক্রিয়া, এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। এখানে কিছু সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হলো:
১. আইনি লড়াই এবং সমর্থন
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ইসকন আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশ শাখা আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা আদালতের মাধ্যমে তার মুক্তির জন্য আবেদন করতে পারে বা সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সহায়তা নেওয়া হতে পারে।
২. আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ
ইসকন সাধারণত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন দেশে তাদের হাজার হাজার ভক্ত রয়েছে। তারা বিশ্বের অন্যান্য শাখা থেকে সমর্থন ও বিবৃতি সংগ্রহ করতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে পারে।
৩. ধর্মীয় কার্যক্রমের সম্প্রসারণ
ইসকন সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক সেবা প্রদান করে থাকে। তারা হয়তো বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা আইনি সমস্যার সাথে সমন্বয় করে তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে পারে, বিশেষ করে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সংহতি এবং ঐক্য বজায় রাখার জন্য।
৪. ধর্মীয় সমাবেশ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
ইসকন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে। এই সমাবেশগুলো ধর্মীয় শান্তি ও ঐক্যের বার্তা প্রচার করতে সহায়ক হতে পারে, তবে আইন অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবেই এসব আয়োজন করতে হবে।
৫. জনমত তৈরি এবং মিডিয়া প্রচার
ইসকন মিডিয়া মাধ্যমে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে এবং সাধারণ জনগণকে তাদের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালাতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদমাধ্যম এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করা হতে পারে।
৬. সংগঠনের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন
যদি পরিস্থিতি তীব্র হয়, ইসকন কিছু পরিবর্তন বা পুনর্গঠন করতে পারে যাতে সংগঠনটি আরও শক্তিশালী ও সংগঠিতভাবে কাজ করতে পারে। এটা অন্তর্ভুক্তি ও সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করার জন্য হতে পারে।
৭. সমাজে আধ্যাত্মিক বার্তা প্রচার
ইসকন তার আধ্যাত্মিক কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করতে পারে, যাতে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় শান্তি এবং মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ হয়। এটি হতে পারে সচেতনতা সৃষ্টি, ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারিত করা বা ভক্তদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
সব মিলিয়ে, ইসকন পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শান্তিপূর্ণ, আইনি এবং আধ্যাত্মিক ভিত্তিতে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে, তবে তাদের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করবে পরিস্থিতির গতি ও তাদের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ওপর।
ইসকন এর ভবিষ্যৎ কি
ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) এর ভবিষ্যৎ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকের ওপর নির্ভরশীল। সংগঠনটির আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য এবং বিশ্বব্যাপী তার সম্প্রসারণের দিকে যদি নজর দেওয়া যায়, তবে কিছু সম্ভাব্য দিক তুলে ধরা যায়:
১. বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ
ইসকনের ভবিষ্যৎ মূলত তার বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের উপর নির্ভর করবে। বর্তমানে, ইসকনের অনেক শাখা রয়েছে বিশ্বজুড়ে, এবং এটি আরও বেশি দেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তারা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতার প্রচার করার জন্য ডিজিটাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে, যা ভবিষ্যতে তাদের আধ্যাত্মিক বার্তা আরও বিস্তৃত করবে।
২. ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা
ইসকন সংস্কৃতি, ধর্মীয় শিক্ষা এবং ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের মূল্যবোধের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে, তারা এই ঐতিহ্য রক্ষা এবং সবার মধ্যে আধ্যাত্মিক সচেতনতা তৈরি করতে আরও কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। বিশেষত, তারা সনাতন ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এবং কৃষ্ণভক্তির সত্যতা তুলে ধরবে।
৩. সামাজিক কাজ এবং দাতব্য কার্যক্রম
ইসকন আগামীতে আরও সামাজিক কাজ এবং দাতব্য কার্যক্রম চালাতে পারে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গরিব এবং দুঃস্থ মানুষের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদান করতে পারে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড ইসকনের জনপ্রিয়তা এবং সমাজে তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।
৪. আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ইসকনের ভবিষ্যৎ কিছু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে, বিশেষত কিছু দেশে বা অঞ্চলে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক বা আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে। তবে, তারা সম্ভবত এগুলো মোকাবেলা করতে পারবে, বিশেষ করে নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে।
৫. ধর্মীয় একতা এবং সংহতি
ইসকন বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম এবং সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে একতা এবং সমন্বয় স্থাপনে কাজ করতে পারে। তাদের ধর্মীয় শাস্ত্র এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা সকল সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যা বিশ্বের সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. নতুন প্রজন্মের প্রতি মনোযোগ
ইসকন তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও জনপ্রিয় হতে পারে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে। তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন ভক্তদের আকৃষ্ট করতে পারে এবং তাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতা প্রচার করতে পারে।
৭. আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের বিকাশ
ইসকনের ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে, যারা সংগঠনটির ধর্মীয় কার্যক্রম এবং উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা বিশ্বজুড়ে শ্রী কৃষ্ণের আসল শিক্ষা এবং গীতার বার্তা প্রচার করে আগের মতোই মানুষকে আধ্যাত্মিক পথে উদ্বুদ্ধ করবে।
ইসকন নিষিদ্ধের আবেদন শুনানিতে যা হল
ইসকন নিষিদ্ধের আবেদন শুনানি: হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
source: https://barta24.com/details/law-court/256398/iskcon
ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন এবং দ্রুত তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য:
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, কেউ কেউ দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সরকার জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
আদালতের এ আদেশ দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ইসকন নিষিদ্ধের আবেদনের পাশাপাশি সরকারকে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আপডেটের জন্য আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
শেষ কথা
ইসকনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে যদি তারা তার আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য এবং সামাজিক কার্যক্রমকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, ইসকন ঐতিহ্যগত ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।
2 thoughts on “ইসকন – ISKCON • ইতিহাস, উদ্দেশ্য, এবং বাংলাদেশে এর কার্যক্রম”